মেয়ের ঘটকালি করতে গিয়ে মাকে ধর্ষণ, লাথিতে ঘটকের মৃত্যু

মেয়ের ঘটকালি করতে গিয়ে মেয়ের মায়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন লোকমান হোসেন (৫০) নামের এক ঘটক। পরে মায়ের মোবাইলে ফোন করে মেয়ের ব্যাপারে কথা আছে বলে পুকুরপাড়ে আসতে বলেন লোকমান। তার কথামত মেয়ের মা পুকুরপাড়ে আসলে তাকে করা হয় ধর্ষণ। ধর্ষণের পর ঘটকের কাছ থেকে ১০০ টাকা চেয়ে বসে আফরোজা বেগম। টাকা না দিলে আফরোজা বেগম উত্তেজিত হয়ে লাথি মারেন লোকমানের অণ্ডকোষে এতেই মৃত্যু হয় লোকমানের।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় বাড়ি থেকে তিন মাইল দূরে মাঠ থেকে লোকমান হোসেন (৫০) নামের এক ঘটকের লাশ উদ্ধারের মামলায় আফরোজা বেগম (৩৪) নামের এক নারীকে গ্রেফতার করলে তার স্বীকারোক্তিতে এসব তথ্য পায় পিবিআই। গ্রেফতারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন আফরোজা বেগম।

পিবিআই জানায়, নিহত লোকমান হোসেন টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার পাকুটিয়া ইউনিয়নের আউটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কৃষিকাজের পাশাপাশি ঘটকালি করতেন। ঘটকালির সূত্রেই তিন মাস আগে লোকমান ও আফরোজার পরিচয় হয়। আফরোজার কিশোরী মেয়ের বিয়ে ঠিক করা নিয়ে মোবাইল ফোনে দুজনের কথা হতো। এভাবে তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

এরপর গত বুধবার (১৪ জুন) রাত ৯টার দিকে লোকমান হোসেন মোবাইল ফোনে আফরোজাকে বসতবাড়ির পেছনে পুকুরপাড়ে আসতে বলেন। সেখানে লোকমান আফরোজাকে ধর্ষণ করেন। এরপর আফরোজা লোকমানের কাছে ১০০ টাকা চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে আফরোজাকে বকাবকি করেন। তখন আফরোজা ক্ষিপ্ত হয়ে লোকমানের অণ্ডকোষে লাথি মারলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর লোকমানকে রেখে বাড়িতে চলে যান আফরোজা।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আফরোজা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের বিয়ের সুযোগ নিয়ে সে আমার সঙ্গে তিন মাস মোবাইলে কথা বলেছে। কথা বলতে বলতে সে আমার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। ওই দিন রাতে সে আমাকে পুকুরপাড়ে ঢেকে নিয়ে মেয়ের বিয়ের কথা বলে আমাকে ধর্ষণ করেছে। এ কারণে আমি তাকে একটি লাথি মেরেছিলাম। লাথিটি অণ্ডকোষে লাগছে আমি বুঝতে পারিনি। যখন দেখলাম সে আস্তে আস্তে নিথর হচ্ছে তখন তাকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে ফেলে আমি বাড়ি চলে আসি। তবে লোকমান হোসেন ঘটকবেশে অনেক নারীর ইজ্জত নষ্ট করেছে।’

সাটুরিয়ায় বাড়ি থেকে ৩ মাইল দূরের মাঠে পড়ে ছিল লাশসাটুরিয়ায় বাড়ি থেকে ৩ মাইল দূরের মাঠে পড়ে ছিল লাশ
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে সাটুরিয়া থানা-পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় একই নিহতের ছেলে আবদুল হাকিম বাদী হয়ে সাটুরিয়া থানায় মামলা করেন। এরপর মানিকগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এসআই সামরুল হোসেনকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এসআই সামরুল ছয় ঘণ্টার মধ্যে একই দিন রাতে পাকুটিয়া গ্রামের মো. আলমাছ আলীর স্ত্রী আফরোজা বেগমকে তাঁর গ্রামের বাড়ি পাকুটিয়া থেকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে আফরোজা হত্যার দায় স্বীকার করলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেছেন মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সামরুল হোসেন। আফরোজা বেগম সাটুরিয়া উপজেলার পাকুটিয়া গ্রামের মৃত আলমাস হোসেনের স্ত্রী।

মামলার বাদী হাকিম বলেন, ‘আমার বাবার লাশ আমাদের বাড়ি থেকে তিন মাইল দূরের মাঠে পড়েছিল। আমাকে ওরা এতিম করেছে। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’

সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) ইমাম আল মেহেদি জানান, নিহত মো. লোকমান হোসেনের ছেলে হাকিম বাদী হয়ে সাটুরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেছে। মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত করে বের হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে।

Share on whatsapp
WhatsApp
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram