বিয়ের পরেও স্বামীর একাধিক নারীর সাথে সম্পর্কের জেরে খুন হন নারী চিকিৎসক জান্নাতুল নাইম সিদ্দিকার (২৭)।ঘটনার পর চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তারকিরার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় রেজাউল করিম রেজার (৩১) সাথে। পরিচয় থেকে প্রণয়, এরপর এক বছরের মাথায় নিজেরা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন।কিন্তু বিয়ার পরও একাধিক নারীর সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন রেজা। বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে সিদ্দিকার সঙ্গে প্রায়ই বাগবিতণ্ডা হয়।
একপর্যায়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী সিদ্দিকাকে হোটেলে ডেকে হত্যা করেন রেজা।
রাজধানীর পান্থপথে একটি আবাসিক হোটেল থেকে সিদ্দিকার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ঘাতক রেজাউল করিম রেজাকে আটকের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আলোচিত হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনার পর র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-২ ও র্যাব-৭ এর যৌথ অভিযানে বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার একটি মেস থেকে রেজাকে আটক করা হয়।
তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের সময় আসামির পরিহিত রক্তমাখা গেঞ্জি, মোবাইল ও ব্যবহৃত ব্যাগ এবং ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকটিমের সঙ্গে রেজার পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২০ সালের অক্টোবরে তারা পরিবারকে না জানিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন। এরপর তারা স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন।
ভিকটিমের সঙ্গে সম্পর্ক থাকাকালীন রেজার একাধিক নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। এই বিষয়টি সিদ্দিকা জানতে পারলে বিভিন্ন সময়ে কাউন্সেলিং করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় বাগবিতণ্ডাও হয়।
একপর্যায়ে রেজা তার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ভিকটিমকে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন। রেজা ১০ আগস্ট ভিকটিমকে তার জন্মদিন উদযাপনের কথা বলে পান্থপথের ‘ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্টে’ হোটেল নিয়ে যায়। ভিকটিমের জন্মদিন ছিল ১২ আগস্ট, এদিন জমকালো ভাবে তার জন্মদিন পালনের প্রলোভন দেখায় রেজা।
১০ আগস্ট সকালে হোটেলে উঠার পর ভিকটিমের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কথা কাটাকাটি, বাগবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয় রেজার। এ সময় রেজা তার ব্যাগ থেকে ধারালো ছুরি বের করে ভিকটিমকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, সিদ্দিকাকে হত্যার পর সে গোসল করে ভিকটিমের মোবাইল সঙ্গে নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। এরপর আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসযোগে চট্টগ্রামে গিয়ে মুরাদপুরে এক আত্মীয়ের সঙ্গে একটি মেসে আত্মগোপন করেন।
গ্রেফতার রেজা ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেন। এমবিএ চলাকালে সে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর সে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালে জুন মাসে সে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগদান করেন।
বুধবার (১০ আগস্ট) সকালে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রেজাউল করিম রেজার সঙ্গে এসে পান্থপথে ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামে আবাসিক হোটেলটিতে ওঠেন সিদ্দিকা। তারা হোটেলটির ৩০৫ নম্বর কক্ষে ওঠেন। সেখানেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। পরে সেই রুম থেকে সিদ্দিকার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।