১৪ দিন জে‌লে থাক‌তে হ‌বে পার্থ ও অ‌র্পিতা‌কে

১৪ দিন জেল হাজ‌তে থাক‌তে হ‌বে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে। পার্থকে রাখা হবে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে।

আলিপুর জেলে রাখা হবে অর্পিতাকে।
শুক্রবার (০৫ আগস্ট) দীর্ঘসময় ধরে রায়দান স্থগিত রাখার পর ভারতের কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা-ইডির চাওয়া মতো পার্থ-অর্পিতার জেল হেফাজত মঞ্জুর করেন আদালত।

তাদের আবার আদালতে তোলা হবে ১৮ আগস্ট।

১২ দিন ইডির হেফাজতে থাকার পর ফের শুক্রবার সাবেক শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতাকে কলকাতার নগর দায়রা আদালতে তোলা হয়েছিল

এদিন ইডির কলকাতার সদর দফতর ‘সিজিও কমপ্লেক্স’ থেকে প্রথমে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। দুপুরের পর পার্থ-অর্পিতাকে তোলা হয় আদালতে।

আদালতে ইডির আইনজীবী এসভি রাজু বলেন, তাদের নামে ‘এমএস অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থার খোঁজ পাওয়া গেছে। যার শেয়ার হস্তান্তর করা হয়েছে পার্থ ও অর্পিতার আত্মীয়দের মধ্যে। ওই সংস্থার ঠিকানা নথিভুক্ত করা হয়েছে অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটের ঠিকানায়। এর পাশাপাশি নতুন করে ৫০টির উপর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফলে তদন্ত শেষ হতে আরও সময় লাগবে। আইনজীবি বিচারককে আবেদন করেন, পার্থ-অর্পিতাকে জেল হেফাজতে নিয়ে জেরা করার।

প্রসঙ্গত, ইডি মনে করছে, পার্থ অর্পিতার অবৈধ অর্থ দেশের বাইরেও ছড়িয়ে আছে। আর সে কারণে পার্থর মেয়ে ও জামাইকে আমেরিকা থেকে ডেকে পাঠাচ্ছে ইডি।

অপরদিকে, আদালতে পার্থর জামিনের আবেদন জানায় তার আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস। তিনি বলেন, পার্থর কাছ থেকে কিছু উদ্ধার করা হয়নি। উনি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছেন না। উনি বিধায়ক পদ থেকেও ইস্তফা দেওয়ার কথাও ভাবছেন। ফলে আর কোনো ভাবেই পার্থবাবু প্রভাবশালী থাকছেন না। উনি অসুস্থ। ওনার ৭২ বছর বয়সও হয়েছে। ওনাকে জামিন দেওয়া হোক। তদন্তের স্বার্থে আদালত যখনই ডাকবে উনি হাজিরা দেবেন।
এর আগে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্ত্রীত্ব ও দলের পদ সবই গেছে। তাও বিচারককে জানিয়েছেন আইনজীবী।

এরপর আদালতে অর্পিতার আইনজীবী নীলাদ্রি ভাট্টাচার্য তার নিরাপত্তার আর্জি জানান। তিনি বলেন, অর্পিতা মুখোপাধ্যায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অর্পিতাকে খাবার ও পানি দেওয়ার আগে তা পরীক্ষা করে দেখা হোক, সেই আর্জি জানান অর্পিতার আইনজীবি। তবে এদিনও তিনি অর্পিতার জামিনের আর্জি করেননি। বরং জেলেই থাকতে চান অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, অর্পিতাকে জেলে রাখা হোক প্রথম শ্রেণির কয়েদি হিসেবে। এর কারণ না বললেও আইনজীবির বিশ্লেষণ অনুযায়ী বোঝা যাচ্ছে, অর্পিতার জামিন হলে প্রাণ সংশয় হতে পারে। যে কারণে খাবার ও পানি পরীক্ষার আবেদন করেছেন।

পরপর তিন আইনজীবি নিজেদের বক্তব্য রাখার পর বিচারক জীবন সাধুখা কিছুক্ষণের জন্য রায়দান স্থগিত করে দেন। এরপর স্থানীয় সময় ৬টা নাগাদ পার্থ ও অর্পিতার ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন তিনি।

২৩ জুলাই পার্থ-অর্পিতাকে গ্রেফতারের পর ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় ইডি। এরপর বুধবার (৩ আগস্ট) আদালতে তোলা হলে আরও দুদিনের রিমান্ডে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। সেই অনুযায়ী, শুক্রবার সকালে দুদিন শেষ হয়েছে।

ইতোমধ্যে কলকাতার টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ায় অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে ৫৫ কোটি ৪৩ লাখ রুপি উদ্ধার করেছে ইডি, পাশাপাশি ছয় কেজি স্বর্ণ, রাশি রাশি রুপার মুদ্রা, মিলেছে প্রচুর সম্পত্তির দলিলও। অর্পিতার ব্যাঙ্কে পাওয়া গেছে ৮ কোটি রুপি। এরপর থেকে প্রকাশ্যে আসছে একের পর এক সম্পত্তির খবর। বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি, গাড়ির যে তালিকা এখনও পর্যন্ত উঠে এসেছে। সবমিলিয়ে উদ্ধার হওয়া সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি রুপির কম নয় বলে ইডির ধারণা। পাওয়া গেছে একাধিক ভুয়া কোম্পানি। মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুটি ডায়েরির উদ্ধার করেছে ইডি। তাতে কোথায় কোথায় থেকে কত টাকা আসত এবং যেত তার তথ্য মিলছে।

Share on whatsapp
WhatsApp
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram