১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় এক সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), যার নেতৃত্বে ছিলেন প্রসীত বিকাশ খীসা। পার্বত্য শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করে সশস্ত্র সংগঠনটি গঠিত হয়েছিল, যার সূচনা হয়েছিল সন্তু লারমার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) থেকে বেরিয়ে আসা তরুণদের উদ্যোগে।
যতদিন যাচ্ছে, ইউপিডিএফ পার্বত্য অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে সক্ষম হলেও, গত কিছু বছর ধরে সংগঠনটির ক্রমবর্ধমান আক্রমণাত্মক কার্যক্রমে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। ২০১৭ সালে, গণতন্ত্রের দাবিতে ইউপিডিএফ বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠিত হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইউপিডিএফ আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে এবং ৬ আগস্ট, রাঙামাটি শহরের রাজপথ দখল করতে গিয়ে বিপুল সংখ্যক কর্মী নিয়ে উপস্থিত হয়। তাদের দাবির মধ্যে ছিল আওয়ামী লীগের শাসনামলে ঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, এবং রাজবন্দিদের মুক্তি।
এমন পরিস্থিতিতে, সন্তু লারমার পিসিজেএসএস এই আগ্রাসনকে প্রতিহত করতে মাঠে নামে, যার ফলে সংঘর্ষের সূচনা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
সাজেকের মতো পর্যটন অঞ্চলে ইউপিডিএফ প্রায়ই তাদের বিরোধী দলগুলোর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। এর ফলে, সাজেকের পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত থাকে এবং প্রশাসন প্রায়ই পর্যটক ভ্রমণে বিধি-নিষেধ আরোপ করে থাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে, ২৪ ফেব্রুয়ারি সাজেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দেড় শতাধিক রিসোর্ট পুড়ে যায়, যার ফলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের প্রায় একশো কোটি টাকার ক্ষতি হয়। প্রশাসন অবশ্য বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তবে সূত্রের দাবি, ইউপিডিএফ কিছুদিন আগে থেকেই সাজেকের পর্যটন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদা না পাওয়ায়, তাদের সন্দেহ যে এই অগ্নিকাণ্ড ইউপিডিএফের কাজ হতে পারে।
এছাড়া, এককালীন ৫ কোটি এবং প্রতি মাসে ৩৪ লাখ টাকা চাঁদা দাবির পর, রবির অন্তত ২১টি মোবাইল টাওয়ার ভাঙচুর করা হয়, এবং এক শ্রমিককে অপহরণ করা হয়। অপহৃত শ্রমিকের বাড়ি রাঙামাটি শহরে।
টেলিযোগাযোগ সংস্থা রবিকে প্রতি মাসে ইউপিডিএফকে ৭০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হয়, তবে সরকার পতনের পর ইউপিডিএফ আরো বেশি চাঁদার পরিমাণ দাবি করছে। এই দাবির কারণে রবি ও তার অংশীদার কোম্পানিগুলোর প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ইউপিডিএফ বর্তমানে চাঁদার টাকায় ভারী অস্ত্র সংগ্রহ করছে, যার মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, যেমন একে-৪৭ রাইফেল। সম্প্রতি মিজোরাম ও ত্রিপুরায় ইউপিডিএফের সদস্যরা এসব অস্ত্র নিয়ে আটক হয়েছে।
চলতি বছরের মার্চে, রাঙামাটির কাউখালি উপজেলায় সেনাবাহিনী একটি গোপন ইউপিডিএফ আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষজ্ঞ সৈয়দ ইবনে রহমত বলেন, এই অঞ্চলের শান্তির জন্য সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন, এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক আনোয়ার আল বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে অস্ত্রধারীদের চাঁদাবাজি একটি বড় সমস্যা। শুধু অস্ত্র উদ্ধার করলেই শান্তি আসবে না; শান্তি প্রতিষ্ঠায় ধারাবাহিক আলোচনার এবং পুনর্বাসন প্রোগ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। খবর পার্বত্য নিউজের।