চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে এক নজিরবিহীন ঘটনায় ভোট ছাড়াই ২১টি পদে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। প্রত্যেক পদে শুধুমাত্র একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই তাদের বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
আইনজীবী সমিতির দীর্ঘ ১৩২ বছরের ইতিহাসে এটি প্রথমবারের মতো ঘটলো, যেখানে কোনো ভোট ছাড়াই সব পদে এককভাবে একটি প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হলেন।
আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী ঘরানার আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের মনোনয়ন ফরম কিনতে বাধা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী আইনজীবী আবদুর রশীদ লোকমান বলেন, ‘দু’দফা লাইব্রেরিতে গিয়েও ফরম কিনতে পারিনি। বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা বাধা দিয়েছেন। বিষয়টি অ্যাডহক কমিটিকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
রশিদ-মাহতাব-জাবেদ সমন্বয় পরিষদের নির্বাচনী সমন্বয়কারী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন বলেন, আমরা ১৬ বছর ক্ষমতায় ছিলাম। এ সময়ে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ নানা পদে বিজয়ী হয়েছেন। এখানে দলীয় বিষয় নিয়ে বিরোধ কখনো ছিল না। এখন তারা যেভাবে ভোটবিহীন পদ দখল করেছেন তা চট্টগ্রাম বারের ক্ষতি করেছেন সম্মান নষ্ট করেছেন।
ভোট ছাড়া এবার আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক পদে হাসান আলী চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে কাজী মো. সিরু এবং সহ-সভাপতি পদে আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুস নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। সহ-সম্পাদক পদে ফজলুল বারী, অর্থ সম্পাদক পদে আনোয়ার হোসেন, পাঠাগার সম্পাদক পদে তৌহিদুল ইসলাম, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে আবদুল জব্বার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আশরাফী বিনতে মোতালেব এবং ক্রীড়া সম্পাদক পদে মঞ্জুর হোসেন নির্বাচিত হচ্ছেন। এছাড়া সদস্য পদে আহসান উল্লাহ, আসমা খানম, বিবি ফাতেমা, মেজবাহ উল আলম, রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, রাহিলা গুলশান শাহেদ হোসেন, হেলাল উদ্দিন, রোবায়তুল করিম ও মোহাম্মদ মোরশেদ ও সাজ্জাদ কামরুল হোসেন নির্বাচিত হয়েছেন।
আইনজীবী সমিতির মূখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা তারিক আহমদ জানান, ‘সম্পাদকীয় এবং সদস্য পদসহ ২১ পদের বিপরীতে যাচাই-বাছাই শেষে ২১ জনের মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়। তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় তারাই আনুষ্ঠানিক ভাবে জয়ী হবেন’
গত ৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের পাঁচ সদস্য পদত্যাগ করেন। তারা অভিযোগ করেন, ‘হেনস্তা, ভয়ভীতি ও হুমকির’ মুখে তারা দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। পরবর্তীতে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।
বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এবং জামায়াতপন্থী বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল যৌথভাবে ‘আইনজীবী ঐক্য পরিষদ’ গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেয়। অন্যদিকে, আওয়ামী সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এবারে ‘রশিদ-জাবেদ-মাহতাব পরিষদ’ নামে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও তারা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি।