বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের অভিযানে র‍্যাব-দুদক, মেলেনি কিছুই!

দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পপতি মাহবুবুল আলমের বাসায় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের তথ্য পেয়ে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গভীর রাতে চট্টগ্রামে অভিযান চালায়। প্রায় আড়াই ঘণ্টার অভিযানে তাদের হাতে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা বা অন্য কোনো আলামত আসেনি। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাত ৩টার দিকে অভিযান শেষ হওয়ার পর দুদক ও র‍্যাব কর্মকর্তাদের হাস্যজ্জ্বল মুখে বাসা থেকে বের হতে দেখা যায়।

অভিযানটি চালানো হয় চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত জামিলাস কটেজ নামের বাসায়। রাত ১২টার পর অভিযান শুরু হয় এবং এর আগে বাসাটির আশেপাশের এলাকা ঘিরে ফেলা হয়। তল্লাশির সময় সংবাদকর্মীসহ কোনো বাহ্যিক কাউকেই বাসার মধ্যে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

অভিযান শেষে, অভিযানের তদন্ত প্রতিবেদন হাতে আসার পর দেখা গেছে, কোনো ধরনের মালামাল বা আলামত উদ্ধার হয়নি। প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১২:১৫ মিনিটে অভিযান শুরু হয় এবং ২:৪০ মিনিটে শেষ হয়। তল্লাশি চলাকালীন কোনো বৈদেশিক মুদ্রা বা সংশ্লিষ্ট কোনো মালামাল উদ্ধার হয়নি, তাই কিছুই জব্দ করা হয়নি।

বিশেষভাবে, র‍্যাবের বিপুল সংখ্যক সদস্য অভিযানে সহায়তা করেছে এবং তাদের সহায়তায় ছিলেন ইউসুফ হাসান, যিনি চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।

তবে এই অভিযানের পেছনে এমন একটি সূত্র ছিল, যা বলছিল যে, বাসাটিতে বিপুল পরিমাণ বিদেশি ও দেশীয় মুদ্রা মজুত রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। এমনকি, অভিযান শুরুর আগে একটি সূত্র দাবি করেছিল যে, র‍্যাব এবং দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মুদ্রাগুলো সরিয়ে ফেলেছেন বা অভিযানের সময় পেছন দিয়ে মুদ্রাগুলো বের করে নেওয়া হয়। এমন একটি পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, কেন অভিযান গভীর রাতে পরিচালনা করা হলো এবং কেন কোনো গণমাধ্যমকর্মীকে আগে থেকে জানানো হয়নি।

অভিযান শেষে দুদক ও র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের কাছে মুদ্রা মজুতের তথ্য ছিল, কিন্তু অভিযানে কিছুই পাওয়া যায়নি। র‍্যাবের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, “আমরা দুদকের সহায়তায় অভিযানে অংশ নিয়েছি, কিন্তু সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি।”

এদিকে, অভিযানের সময় বাসার সামনে কিছু নিরাপত্তাকর্মী উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু তারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি। এক সিকিউরিটি গার্ড জানান, বাসার পেছনে আরেকটি দরজা ছিল, যেখান দিয়ে সম্ভবত কোনো কিছু সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তবে অভিযানের সময় তারা সেই পথে যেতে দেওয়া হয়নি।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম ১৯৮৩ সাল থেকে ব্যবসায় জড়িত। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে তার ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ এসেছে যে, তার বাসায় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা মজুত করা হয়, বিশেষ করে ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে যখন দেশে ডলার সংকট চলছিল।

অভিযান শেষে, বাসার ভিতরের কেউই কোন মন্তব্য করতে চায়নি, তবে অভিযানে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখে মনে হচ্ছিল, অভিযানটি ছিল এক ধরনের নাটকীয় পরিস্থিতি, যেখানে কিছুই পাওয়া যায়নি।

Share on whatsapp
WhatsApp
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram