সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের পতনের পর এখন সিরিয়ার শাসনভার কার্যত বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান আবু মোহাম্মদ আল জোলানির হাতে।
আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার কিছুদিন পরেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রশাসনিক পুনর্গঠন শুরু করেছেন জোলানি। এরই মধ্যে শনিবার সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নতুন সদস্য মনোনীত করেছেন তিনি। রোববার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এই খবর জানায়।
আসাদের অধীনে থাকা সেনা কমান্ডের একজন জেনারেল, হাসান আল-শিবানি, সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। আর এক সরকারি সূত্র জানিয়েছে, বিদ্রোহী দলগুলোর প্রধান নেতা, হায়াত তাহরির আল-শামের শীর্ষ নেতা মুরহাফ আবু কাসরাকে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক রেসুল সেরদার দামেস্ক থেকে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, আবু কাসরা ও আল-শিবানি, দুইজনই এইচটিএস নেতা জোলানির ঘনিষ্ঠ মিত্র। এককথায়, সিরিয়ার নতুন সরকার গঠনে জোলানির এইচটিএস গোষ্ঠী প্রধান ভূমিকা পালন করছে।
রেসুল সেরদার আরও জানিয়েছেন, সিরিয়ার নবগঠিত ১৪ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভার সব সদস্যই এইচটিএস নেতা আবু মোহাম্মদ আল জোলানির আনুগত্যে আছেন। জোলানি, যাকে আহমেদ আল-শারা নামেও পরিচিত, দেশের পুনর্গঠন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করছেন।
এদিকে, প্রায় ১৩ বছর পর কাতার সিরিয়ায় তাদের দূতাবাস কার্যক্রম আবার চালু করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, তারা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে তাদের কূটনৈতিক মিশন পুনরায় শুরু করতে প্রস্তুত। এসব ঘটনার মধ্যে, এক সময়ের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত এইচটিএসের প্রধান নেতা জোলানির সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলও উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক করেছে।
ইতিহাসে এইচটিএস একসময় সিরিয়ার আল-কায়েদা শাখার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল, তবে বর্তমানে গোষ্ঠীটি নিজেদের রূপান্তরিত করেছে এবং সবাইকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করছে। তাদের এখন মূল লক্ষ্য হলো একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা, যাতে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা যায়।
জোলানি বলেছেন, দেশের পুনর্গঠন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন তার প্রধান লক্ষ্য। নতুন করে কোন সংঘাতে জড়ানোর আগ্রহ নেই তার। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করলেও ১১ বছর পর, সিরিয়ার পরিস্থিতি পরিবর্তিত হলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে এবং সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।
উল্লেখ্য, বিদ্রোহী বাহিনী ৮ ডিসেম্বর দামেস্ক শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়, যার ফলে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ২৪ বছর পর দেশ ছাড়েন। এই ঘটনাটি সিরিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, কারণ এটি আল আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে, এবং প্রায় ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের শেষে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে।