ছয়মাস আগেই জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা হয়েছিল : সিটিটিসি প্রধান

আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছয় মাস আগে থেকেই করা হয়েছিল। এ ঘটনায় জেলখানায় এবং বাইরে মূল সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন ফাতিহা তাসনীম শিখা।

শনিবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এ কথা বলেন।

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) ঢাকার কোতয়ালি থানার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুজনকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। তারা হলেন- ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা এবং হুসনা আক্তার ওরফে হুসনা।

মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ফাতেমা তাসনীম শিখা ২০১৪ সালে প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। একপর্যায়ে তার ভাই মোজ্জাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমনের মাধ্যমে তিনি আনসার আল ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত হন এবং পরে সায়মনের মাধ্যমে আবু সিদ্দীক সোহেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সোহেল আনসার আল ইসলামের সামরিক (আসকারি) শাখার সদস্য ছিলেন।

তিনি বলেন, সোহেলের সঙ্গে বিয়ের পর থেকে তিনি আরও গভীরভাবে সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৭ সালে মুক্তমনা ব্লগার অভিজিত রায়, দিপন ও নীলাদ্রি নিলয় হত্যা মামলার আসামি হিসেবে আবু সিদ্দিক সোহেল গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারের পর থেকে বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে শিখা কারাবন্দি সোহলসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে সংগঠনের কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু করেন।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা মোতাবেক গত বছরের ২০ নভেম্বর আদালতের কার্যক্রম শেষে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়। শিখা এ কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন।

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, পরিচয় গোপন করে আনসার আল ইসলামের সদস্যরা জঙ্গি ছিনতাইয়ের পুরো পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে ঢাকা এবং এর পাশের জেলায় একাধিক আনসার হাউস ভাড়া নেয়। সেখানে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ এবং সামরিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আয়মান এবং শিখাসহ অজ্ঞাতনামা আনসার আল ইসলাম সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং করতেন।

ঘটনার প্রায় ছয় মাস আগে থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয় জানিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সিএমএম কোর্টে হাজিরা দেয়ার সময় এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয় এবং পরিকল্পনার সমন্বয়ক হিসেবে শিখাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে ঘটনার দিন তিনি সিএমএম কোর্ট এলাকায় এসে পৌঁছে কৌশলে তার বাবার কাছ থেকে বিছিন্ন হয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া মশিউর রহমান ওরফে আয়মান’সহ আনসার আল ইসলামের সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।

পলাতক দুই জঙ্গি এখনো দেশে আছে বলেই ধারণা পুলিশের।

জঙ্গি ছিনতাই পরিকল্পিত হলে গোয়েন্দারা আগে জানল না কেন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সবকিছুই যে গোয়েন্দারা জানতে পারবে এমন কোনো কথা নেই। কাজটি তারা অতি গোপনে করেছে। স্ত্রী পরিচয় দিয়ে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গির সঙ্গে দেখা করেছে।’

‘স্বামী-স্ত্রী যখন হাজতখানায় দেখা করেছে। ইশারা-ইঙ্গিতে তারা একথাগুলো (পালিয়ে যাবার প্লান) বলেছে। আমরা যারা এসব নজদারি করি, তাদের নজর এড়িয়ে তারা কাজটি করতে সক্ষম হয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকার নিম্ন আদালত প্রাঙ্গণ থেকে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য আবু সিদ্দিক সোহেল ও মইনুল হাসান শামীমকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। এ ঘটনায় রাতে ২০ জঙ্গিকে আসামি করে মামলা করেন পুলিশ পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন আকন্দ।

Share on whatsapp
WhatsApp
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram