রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আন্তরিক না মিয়ানমার: প্রধানমন্ত্রী

মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল, কিন্তু এখন মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাতারে এলডিসি সম্মেলন চলাকালে আল জাজিরাকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এমন অভিযোগ করেন। তিনি দ্রুততম সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমারের ওপর বিশ্বনেতাদের চাপ বাড়ানোর তাগিদ দেন।

আল জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‌‘যখন ঘটনার সূত্রপাত্র হয় তখন অনেক রোহিঙ্গা নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আমাদের খুব খারাপ লেগেছিল। তাই আমরা সীমান্ত খুলে দিয়ে তাদের আসতে দেই। মানবিক দিক থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য আশ্রয় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। একইসঙ্গে আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করি। তাদের বলি, রোহিঙ্গারা তোমাদের দেশের নাগরিক, তাদের ফিরিয়ে নেয়া উচিত।’

তবে দুর্ভাগ্যবশত মিয়ানমার ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি রোহিঙ্গাদের নিজের বাড়ি ও দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কিন্তু এটি সত্যি খুব কঠিন।’

রোহিঙ্গাদের ভালো ব্যবস্থাপনায় রাখতে বাংলাদেশ সরকার কাজ করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা তাদের জন্য ভাসানচরে আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি খুব ভালো না। তারা এখন নিজেরা একে অপরের সঙ্গে সংঘাতে জড়াচ্ছে। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।’

এ সময় তিনি চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সবকিছু কঠিন করে তুলেছে জানিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধ অবস্থা থেকে পক্ষগুলোকে সরিয়ে নিয়ে আসার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী ৫ থেকে ৮ মার্চ দোহায় অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে সহজ উত্তরণের জন্য বৈশ্বিক সমর্থন চান। সেখানে তিনি একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। সম্মেলনে অংশগ্রহণ ছাড়াও তিনি কাতারের আমিরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এ সময় জ্বালানি খাতে সহযোগিতাসহ দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলো আলোচনায় স্থান পায়। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় পদক্ষেপসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে কার্যকর প্রযুক্তির জন্য বেসরকারি খাতকে প্রণোদনা দেয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ সময় ধরে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে বিতাড়নের শিকার হচ্ছিল। ১৯৭০ সাল থেকে শুরু করে ১৯৮০, ১৯৯০ ও সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ব্যাপক অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু করে। বর্বর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা ঢলে মিয়ানমার থেকে অন্তত সাড়ে ৭ লাখ উদ্বাস্তু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। দেশের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে সবমিলিয়ে অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়।

এর বাইরে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যাও কম নয়। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২৩ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে প্রত্যাবাসন চুক্তি এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’-এর একটি দলিল স্বাক্ষর করে, কিন্তু মিয়ানমারের অনাগ্রহের কারণে বাংলাদেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি।

Share on whatsapp
WhatsApp
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram