তীব্র শীতে বাড়ছে নিউমোনিয়া আক্রান্তের সংখ্যা, ঝুঁকিতে শিশুরা

দেশে তীব্র শীতে সব বয়সীরাই নাকাল হলেও সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি পার করছে শিশুরা। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দিসহ শীতজনিত নানা রোগ মাথাচাড়া দিলেও মৃত্যুদূতের মতো থাবা বসিয়েছে নিউমোনিয়া।

নিউমোনিয়ার পাশাপাশি বেড়েছে শিশুর শীতজনিত ডায়রিয়ার প্রকোপও
নিউমোনিয়ার পাশাপাশি বেড়েছে শিশুর শীতজনিত ডায়রিয়ার প্রকোপও।

পৃথিবীতে আসার দুই মাস পার না হতেই কঠিন সময়ের মুখোমুখি শিশু নূর। জন্মের পর শারীরিক কিছু জটিলতায় দুবার যেতে হয় অস্ত্রোপচারের টেবিলে। তবে তার চেয়েও এখনকার পরিস্থিতি যেন আরও জটিল ও বিপজ্জনক।

গত তিন দিন ধরে ঠান্ডার সঙ্গে কাশি। তবে হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে নূরকে নিয়ে আসা হয় বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে। বর্তমান পরিস্থিতি দেখে নূর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত বলে ধারণা চিকিৎসকদের।

নূরের মা বলেন, কয়েকদিন ধরেই ঠান্ডার সঙ্গে কাশি রয়েছে। হঠৎ করেই শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছি। চিকিৎসকরা বলছেন, নিউমোনিয়ার লক্ষণ রয়েছে।

বর্তমানে হাসপাতালটিতে নূরের মতো আরও অনেক শিশুই পার করছে কঠিন সময়। দমের সঙ্গে যুদ্ধে লড়ছে কোমলমতিরা। পুরো হাসপাতালজুড়েই শুধু চিৎকার আর কান্নার শব্দ। সন্তান নিয়ে দুর্বিষহ এক সময় পার করছেন অভিভাবকরা।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হঠাৎ টানা কনকনে শীত অনেকের কাছেই সহনীয় হচ্ছে না। বেশি কষ্ট হচ্ছে শিশু ও বয়স্কদের। ঘন ঘন শ্বাস নিলে ও খিঁচুনি উঠলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা যাবে না।

হাসপাতালটির পরিসংখ্যানও দিচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতির ভয়াবহতা। চলতি বছরের প্রথম আট দিনেই হাসপাতালটিতে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি শিশুর সংখ্যা ২২০।

নিউমোনিয়া নিয়ে বর্তমানে ভর্তি আছে ২০ শিশু। তবে সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয়টি হচ্ছে বছরের প্রথম সাত দিনেই নিউমোনিয়া আক্রান্ত ৬ শিশুর মৃত্যু। শিশুকে ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে বাঁচাতে অভিভাবকদের সচেতনতার ওপর জোর দিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন বিপদচিহ্ন দেখা মাত্রই নিতে হবে হাসপাতালে।

শীতের এই সময়টাতে শিশুকে নিউমোনিয়া থেকে বাঁচাতে অভিভাবকদের আরও বেশি যত্নশীল ও সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ানুল আহসান বিপুল বলেন, শীতের এই সময়টাতে শিশুর বাড়তি যত্ন নিতে হবে। শিশুকে পরিষ্কার গরম কাপড় পরিয়ে রাখা, ঘর বদ্ধ না রেখে আলো-বাতাসের প্রবাহ রাখা এবং ঠান্ডার মধ্যে বাচ্চাদের নিয়ে অহেতুক ঘোরাঘুরি করা উচিত হবে না।

শীতজনিত রোগে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধারণক্ষমতার তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি শিশু ওয়ার্ডে। এক বেডে ২ জনের পাশাপাশি মেঝেতেই দেয়া হচ্ছে সেবা। চিকিৎসকরা বলছেন, শয্যা আর লোকবল সংকটে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, বরিশাল বিভাগে এখন পর্যন্ত শীতজনিত রোগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ হাজার ২৭৬ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের।

এ ছাড়াও সারা দেশেই নিউমোনিয়ার পাশাপাশি বেড়েছে শিশুর শীতজনিত ডায়রিয়ার প্রকোপও।

Share on whatsapp
WhatsApp
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram