দেশের ভাবমূর্তি কেউ নষ্ট করবে আমি মেনে নেব না: শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কেউ নষ্ট করবে সেটা বঙ্গবন্ধুকন্যা হিসেবে তিনি মেনে নেবেন না।

শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ আনার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্নীতি করে টাকা বানাতে আসিনি। আমার বাবা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, আর আমি চার চারবার প্রধানমন্ত্রী। আমার পরিবার যদি দুর্নীতিই করত, তাহলে আমরা দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারতাম না। আমরা দেশের মানুষকে দিতে এসেছি, মানুষের জন্য করতে এসেছি। এ কারণেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কেউ নষ্ট করবে, এটা অন্তত আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে হয়ে মেনে নিতে পারি না।’

তিনি বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করব। আমি ধন্যবাদ জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি, তারাই আমাকে সাহস দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতেু করেছি। শুধু পদ্মা সেতুই না, তিনটা এয়ারপোর্ট আন্তর্জাতিক মানের আওয়ামী লীগের করা, চতুর্থটা হচ্ছে কক্সবাজারে। সারা দেশে রাস্তাঘাট, ব্রিজ করেছে আওয়ামী লীগ। কিছুদিন আগে ১০০টা সেতু, ১০০টা সড়কের উন্নয়ন আমরা করেছি।’

উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এমন উন্নয়নকাজ কোনো দিন কোনো সরকার কি করতে পেরেছে? আপনারাই বলেন? আওয়ামী লীগ সরকার পেরেছে। আমরাই পেরেছি।’

জাতির পিতা ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ঘর করতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু সেটা সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। তাই ৯৬ থেকে আমরা শুরু করেছি ভূমিহীন মানুষদের ঘর করে দেয়া। আজকে ৩৫ লাখ মানুষ বিনামূল্যে ২ কাঠা জমি এবং ঘর ও জীবন জীবিকার সুযোগ পাচ্ছে। সেটা আমরা করে দিয়েছি।

নিজের জীবন থাকতে দেশের স্বার্থ কারও কাছে বিলিয়ে দেবেন না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের ধারাবাহিকতার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে। দেশের স্বার্থ কারও কাছে বিলিয়ে দেয়া হবে না।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ করছে। দেশকে বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।

আওয়ামী লীগপ্রধান বলেন, ‘ভোট দেয়ার অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার- আওয়ামী লীগই সেটা নিশ্চিত করেছে। আওয়ামী লীগের স্লোগান ছিল- আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। আমরা নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছি। তাদের আর্থিক সক্ষমতা তাদের হাতে দিয়ে দিয়েছি। তারা যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেই সুযোগ করে দিয়েছি। সবাইকে ভোটার আইডি কার্ড করে দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন-২০২২ করে দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যদি ভোট চুরির নিয়ত থাকতো, তাহলে তো খালেদা জিয়ার মতো আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন করতে পারতাম। আমরা সেটা করি নাই। আওয়ামী লীগ কখনো নির্বাচন কমিশনে হস্তক্ষেপ করেনি। কেননা আমরা জনগণের ভোটে বিশ্বাসী ‘

এদিকে, সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশের উন্নয়ন অর্জন বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, আর বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, গত ৪৭ বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা শেখ হাসিনা। সাহসী রাজনীতিক, দক্ষ প্রশাসক ও কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আছেন বলেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ সম্ভব হয়েছে।

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের মনে বড় জ্বালা, বড়ই অন্তর্জ্বালা। শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করেই ফেলল। ২৮ তারিখ মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন। এই জ্বালা আর সইতে পারে না। নির্বাচন করলে তারা জিততে পারবে না। সেই জন্য সরকার হটানোর ষড়যন্ত্র করছে। শেখ হাসিনাকে ২০বার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে হটাতে পারলে ময়ূর সিংহাসন ফিরে পাবে, সেই আশা করছে তারা।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ভোট চুরির বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে, ভুয়া ভোটারের বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে খেলা হবে। নির্বাচনেও খেলা হবে, আন্দোলনেও হবে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন। সবার বিশ্বস্ত ঠিকানা শেখ হাসিনা। আগুন সন্ত্রাসকে রুখতে, জঙ্গিবাদ রুখতে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।

সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

এর আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তিনি। গাওয়া হয় জাতীয় সংগীত। পায়রা ওড়ানোর পর বেলুন উড়িয়ে শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন।

সকাল ১০টা ২০ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলন মঞ্চে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগপ্রধান।

Share on whatsapp
WhatsApp
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram