চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ ১৪ মামলা আসামি যুবলীগ ক্যাডার অমিত মুহুরী চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নিজ সেলে খুন হয়েছেন। বুধবার রাতে কারাগারের ৩২ নম্বর সেলে কয়েদি রিপন নাথের সাথে মারামারির ঘটনায় তিনি নিহত হন। অমিত মুহুরী চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত।
কারাগার সূত্র জানায়, নিজেদের সেলে মারামারির এক পর্যায়ে রিপন নাথ ইট দিয়ে অমিতের মাথা থেতলে দেয়। রাত ১২টার দিকে কারারক্ষীরা অমিতকে চমেক হাসপাতালের নিউসার্জারি বিভাগে ভর্তি করে। সেখানে তার মাথায় ৩০টি সেলাই দেয়া হয়। পরে রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, নগরীর এনায়েত বাজার রানীর দিঘীতে ড্রামভর্তি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় একটি খুনের মামলায় কারাগারে ছিলেন অমিত মূহুরী। তার নামে অন্তত ১৪টি মামলা রয়েছে।
advertisement
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শুনেছি কারাগারে মারামারিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী আমিত মুহুরী মারা গেছেন। তবে আমাদেরকে কারাকর্তৃপক্ষ এখনো লিখিতভাবে জানায়নি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে অমিত মুহুরীকে মাথায় ও শরীরের বিভিন্নস্থানে গুরুতর জখম অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে কারারক্ষীরা। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ২৮ নং ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন। পরে রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
জানা গেছে, নিহত অমিত মুহুরী কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী। হাসপাতালে তার মারা যাবার খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান তার অনুসারীরা। তারা রাত ২টার দিকে চমেক হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিউরোসার্জারি বিভাগে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। পরে সিএমপির দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
পুলিশ জানায়, ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট নগরীর কোতোয়ালি থানার এনায়েত বাজার রানীর দিঘী থেকে সিমেন্ট ঢালাই করা ড্রামের ভেতর থেকে এক অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে অনুসন্ধানে জানা যায় নিহত যুবক রাউজান পৌর সভার রেজাউল করীমের পুত্র ইমরানুল করিম ইমন (২৬)।
পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৩০ আগস্ট শফিক ও শিশির নামে দুইজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর ইমন খুনের রহস্য বেরিয়ে আসে। তারা পুলিশকে জানায়, নিজের স্ত্রীর চৈতীর সাথে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে, এ সন্দেহে ৮ আগস্ট ২০১৮ রাতে বাল্যবন্ধু ইমনকে নগরীর নন্দনকাননস্থ নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে যায় যুবলীগ সন্ত্রাসী অমিত মহুরী। সেখানে রাতভর নির্যাতনের পর ভোরে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করে লাশ ড্রামে ঢুকিয়ে রাখে। তিনদিন লাশটি বাথরুমে রেখে ১২ আগস্ট গভীর রাতে পার্শ্ববর্তী রানীর দিঘিতে ড্রামভর্তি লাশ ফেলে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় ২ সেপ্টেম্বর রাতে কুমিল্লার একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে পালিয়ে থাকা অমিত মুহুরীকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশ। তখন থেকে কারাগারে আটক ছিল সে।
সিএমপির কোতোয়ালী থানার তৎকালিন ওসি (বর্তমানে আকবর শাহ থানার ওসি) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, অমিত মুহুরী নগরীর ভয়ঙ্কর খুনিদের একজন। তার নামে রেলওয়ে টেন্ডারকে কেন্দ্র করে ২০০৩ সাথে সিআরবির জোড়াখুনসহ অন্তত একডজন মামলা রয়েছে।