দুবাইতে বসে চাঁদাবাজি করছে শীর্ষ সন্ত্রাসী বাবর

দুবাইতে বসে চাঁদাবাজি করছে শীর্ষ সন্ত্রাসী কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক উপ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। চট্টগ্রামের অপরাধ জগতের মূর্তিমান আতঙ্ক। তবে, তিনি দেশে নেই এখন। প্রাণ বাঁচাতে ২০১৮ সালে পাড়ি জমান দুবাইতে। আর দুবাই থেকেও অনুসারী ক্যাডার দিয়ে নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, জুয়ার আসর, দখলবাজি ও নির্মাণ কাজে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড। সম্প্রতি দুবাই থেকে হোয়াটসঅ্যাপে অডিও রেকর্ডে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ব্যবসায়ী আইয়ুব আলীর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে প্রাণনাশের হুমকি দেন বাবর। একইভাবে কয়েকদিন ব্যবহারের জন্য নেয়া বিলাসবহুল গাড়ি ও পাওনা কোটি টাকা ফেরত চাওয়ায় শাহ আলম নামে রেলের এক ঠিকাদারকেও হত্যার হুমকি দেন তিনি।

জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ঠিকাদার শাহ আলম ও ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন চট্টগ্রাম মহানগরীর দুটি থানায়। এরমধ্যে খুলশী থানায় করা সাধারণ ডায়েরিতে আয়ুব আলী উল্লেখ করেন, ২৭ ও ২৯শে আগস্ট ৯৭১৫২৩৭৮২৮২৫ নম্বর থেকে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে অডিও বার্তায় চাঁদা চেয়ে হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর তাকে ও তার পরিবারের ক্ষতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন।

অন্যদিকে, নগরীর সদরঘাট থানায় করা সাধারণ ডায়েরিতে ঠিকাদার শাহ আলম উল্লেখ করেন, ব্যবসা করতে গিয়ে বাবরের সঙ্গে তার পরিচয় ও আর্থিক লেনদেন হয়। একপর্যায়ে তার ১ কোটি ২৬ লাখ টাকার প্রাডো গাড়ি কয়েকদিন ব্যবহারের জন্য নেন বাবর। গত বছর সন্ত্রাসী অমিত মুহুরী কারাগারে মারা গেলে বাবর বিদেশে চলে যান। পরবর্তীতে উক্ত গাড়ি ফেরত চাইলে বাবর ও তার অনুসারীরা তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

সদরঘাট থানার ওসি এসএম ফজলুর রহমান ফারুকী বলেন, হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ঠিকাদার শাহ আলম। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ওসি জানান, বাবর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার এক বছরের মাথায় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে বাবর পাড়ি জমান থাইল্যান্ডে। সেখানে গড়ে তোলেন হোটেল ব্যবসা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার এক বছর পর আবারো দেশে ফেরেন বাবর। পরে তিনি থাইল্যান্ডের ব্যবসা ছেড়ে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন।

এরমধ্যে ২০১৩ সালে সিআরবিতে জোড়া খুনের ঘটনায় করা মামলায় ঢাকা থেকে বাবরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ডাবল মার্ডার মামলার আসামি হওয়ার পর যুবলীগের সদস্য পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয় তাকে। কয়েক মাস পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হন বাবর।

এরপর ২০১৮ সালের ১৩ই অক্টোবর র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সন্ত্রাসী অসীম রায় বাবু নিহত হওয়ার পরই দুবাই চলে যান বাবর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে ফিরে আসেন। ২০১৯ সালের ২৯শে মে রাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সন্ত্রাসী অমিত মুহুরী খুন হলে বাবর আবার দুবাই চলে যান। দুবাইয়ে অবস্থান করলেও বাবরের হয়ে রেলের পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের চাপ দিয়ে চাঁদাবাজি করছেন তার অনুসারী ক্যাডার রানা, অজিত, লিটুসহ কয়েকজন।

ভুক্তভোগীরা জানান, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে বেপরোয়া হয়ে ওঠে বাবর। রেল পূর্বাঞ্চলের প্রায় সব টেন্ডারে ১০ শতাংশ হারে কমিশন দিতে হয় তাকে। যুবলীগের প্রভাব খাটিয়ে রেলের জায়গাও লিজ নিয়েছিলেন বাবর। সমপ্রতি জায়গাটি উদ্ধার করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ব্যবসা না থাকলেও বাবর এখন শত কোটি টাকার মালিক। নন্দনকানন বৌদ্ধ মন্দির রোডে রয়েছে তার পাঁচতলা বাড়ি। ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ডি ব্লকের ২ নম্বর রোডের ২৩/১ নম্বরের বাড়ির চারতলায় রয়েছে ফ্ল্যাট। ঢাকার বনানীতে দুটি ৭ তলা বাড়ি। নন্দনকানন ২ নম্বর গলিতে তার স্ত্রীর নামে তিন হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং স্টেশন রোডে একটি মদের বারসহ নামে-বেনামে রয়েছে বেশ কয়েকটি গাড়িও।

বাবর নিজের নামে কোনো ব্যাংক হিসাব পরিচালনা না করলেও স্ত্রী জেসমিন আক্তারের নামে রয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাংক হিসাব। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-এবি ব্যাংক লিমিটেডের অ্যাকাউন্ট। যার নম্বর- ৪১০১৫৭৯৮২৬৩০০। এ ছাড়া ডাচ্‌-বাংলা, মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংকেও রয়েছে একাধিক অ্যাকাউন্ট। বাবরের স্ত্রীর এক বোন চট্টগ্রামে একটি ব্যাংকে কর্মরত আছেন। মূলত তার সহায়তায় লেনদেন হয়।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোস্তাক আহমদ খান বলেন, বাবরের বিরুদ্ধে রাউজানের আকবর-মুরাদ হত্যা, বিএনপিকর্মী আজাদ হত্যা, মির্জা লেনে ডাবল মার্ডার, সিটি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা আশিককে গোলপাহাড় মোড়ে হত্যা, তামাকুমুণ্ডি লেনে রাসেল হত্যা, এমইএস কলেজ থেকে ফরিদ নামের একজনকে ডেকে নিয়ে ষোলশহর ২ নম্বর গেটে হত্যা এবং সর্বশেষ ২০১৩ সালে সিআরবিতে রেলের টেন্ডার নিয়ে সংঘটিত জোড়া খুনের মামলা ছাড়াও এক ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে। পুলিশ তাকে খুঁজছে।

Share on whatsapp
WhatsApp
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram