চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে রকিবুল হক তুষার নামের এক তরুণ ক্রিকেটারের আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার গড়দোয়ারা ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটলেও বুধবার দুপুরের পর বিষয়টি জানাজানি হয়।
নিহত রকিবুল হক তুষার উদীয়মান ক্রিকেট একাডেমি ও চট্টগ্রাম মোহামেডান একাডেমির হয়ে বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। তার গ্রামের বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার গড়দোয়ারা ইউনিয়নে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রকিবুল হক তুষারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পরিবার জানিয়েছি, বিকেলে নিজ কক্ষের দরজা বন্ধ করে ফ্যানে রশি বেঁধে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে উপজেলার একটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে তার মৃত্যুর পর নিহত তুষারের চাচা আকরামুল হক চৌধুরী বুধবার সকালে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেয়া এক পোস্টে তুষার ইঞ্জুরিজনিত কারণে ক্রিকেট থেকে ছিটকে পড়ে বিষন্নতায় ভোগছিলেন বলে দাবি করেন। তিনি লেখেন, ‘ফিল্ডিং করার সময় হাতে ইন্জুরি হয় তুষারের। ডাক্তারের পরামর্শ ও যেন আর খেলার মধ্যে না যায়, খেলা থেকে ছিটকে পড়ে সে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।কারো সাথে তেমন কথা বার্তা বলে না, একা একা থাকতে শুরু করলে ও সব সময় তৌহিদ তানভীর কে বলতো এতদূর এগিয়ে যাওয়ার পর দূর্ভাগ্য আমার স্বপ্ন টা পূরণ হচ্ছে না।আর কখনো খেলার মাঠে যাওয়া হবে না।স্বপ্ন টা ভেঙ্গে গেলো।গত মাসে আমি ও রহিম ভাই দেশে যাওয়ার পর তার এ ভারসাম্যহীন অবস্হা দেখে তার সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করি। শেষ পর্যন্ত সে রাজি হয় বিদেশ আসবে। তার পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকার কারণে সেটা রেনু করতে বলি । ২৩ আগস্ট পাসপোর্ট হাতে পাই। আমার ফ্যামিলি দেশে থেকে আসার সময় ২৬ আগস্ট তুষারের ছোটভাই তামবির দুবাই আসেন। সেপ্টেম্বরে লাস্টের দিকে তুষার দুবাই আসার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছিল।প্রতিদিন আমার সাথে কথা হতো। তার কথার পরিবর্তনটা আমি বুঝতে পারছিলাম।’
এই পোস্টের সাথে তুষারের কয়েকটি ছবি ও একটি সুইসাইডাল নোট (চিরকুট) সংযুক্ত করেন আকরাম চৌধুরী। ওই চিরকুটে হাতে লেখা রয়েছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমি আরাফার দিনের রোজা রেখেছিলাম। হাদিসে আছে আরাফার দিনের রোজা রাখলে সামনে এবং পেছনের ১ বছরের কবিরা ছগিরা গুনাহ মাফ হয়। আমি জানি Sucide কবিরা গুনাহ। ইনশাআল্লাহ রোজার বরকতে আমি গুনাহ মাফ পাবো। ইনশাআল্লাহ আমি জান্নাতে যাবো। আমি sucide করতেছি এই সুন্দর সুযোগটা কাজে লাগানোর জন্য৷’ (বানান অপরিবর্তিত)
স্থানীয় ইউপি সদস্য আনিসুল ইসলাম এই বিষয়ে বলেন, ‘গতকাল সে আত্মহত্যা করেছে, আজ আসরের পর দাফন হয়েছে। যতটিকু জেনেছে ক্রিকেট খেলা নিয়ে সে মানসিক সমস্যায় ছিলো।’
তুষার যে দুটি ক্লাবের হয়ে খেলতেন, ওই দুটি ক্লাবেই তার কোচ হিসেবে ছিলেন ফিরোজ খান। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘তুষার ফাস্ট বোলিং অলরাউন্ডার ছিলো, ভালো বল করত। ব্যাট হাতেও দারুণ ছিলো। দেশের প্রায় সব জেলার হয়ে খেলেছে। গত বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হওয়া চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার লীগের আগে বাইরের টিমের হয়ে খেলতে গিয়ে হাত ভেঙে ফেলে তুষার। প্রিমিয়ার লীগে মোহামেডানের হয়ে খেলার কথা থাকলে সেই ইঞ্জুরির কারণে আর খেলতে পারেনি। এরপর থেকে সে আর কখনো একাডেমিতে আসেনি। আমি তখন থেকে ৭-৮ বার কল দিয়েছি, প্রতিবারই ইঞ্জুরি আর পারিবারিক সমস্যার কথা বলেছিলো। সর্বশেষ ৬ থেকে ৭ দিন আগে ঢাকায় খেলার জন্য কল দিয়েছিল, সে বলেছে ফিটনেস নেই এখন। হাতে ব্যথা পাওয়ার পর ডাক্তার কী বলেছে-না বলেছে আমরা জানতাম না, আমাদের কিছু জানায়নি।’
তবে এই বিষয়ে তার পরিবারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।