দীর্ঘ দেড় যুগ পর চট্টগ্রামের মাটিতে পা রাখলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে এবার তিনি এসেছেন সরকারপ্রধান হিসেবে। নিজ গ্রামের মানুষ থেকে শুরু করে চট্টগ্রামবাসী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়—সবাই যেন পেয়ে গেছে এক নতুন আশার আলো।
চট্টগ্রামে পৌঁছেই তিনি জানান দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দরকে আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা। একইসঙ্গে উপহার দিয়েছেন বহু প্রতীক্ষিত কালুরঘাট রেল-কাম-সড়ক সেতুর ঘোষণা। বোয়ালখালী ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি এবার বাস্তবায়নের পথে। প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়, যার কাজ শেষ হবে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর নাগাদ। ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১০০ ফুট প্রস্থের এই সেতুর নদীর ওপর অংশ হবে ৭০০ মিটার এবং উভয় পাশে থাকবে ৪.৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট।
চট্টগ্রামবাসীর জন্য আরও এক সুখবর নিয়ে এসেছেন ড. ইউনূস—দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের জন্য ২৩ একর জমির দলিল হস্তান্তর। দক্ষিণ কাট্টলীর এই স্থানে আধুনিক হৃদরোগ সেবার সকল সুবিধাসহ (ক্যাথল্যাব, ওপেন হার্ট সার্জারি ইউনিট, আইসিইউ, সিসিইউ ইত্যাদি) একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল নির্মিত হবে, যাতে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতরাও পাবেন বিশেষ সেবা।
চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যা নিয়ে সরাসরি কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। সার্কিট হাউস সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন,
‘আমরা আর তাত্ত্বিক আলোচনা চাই না, এবার চাই বাস্তব পরিবর্তন। এবছর হয়তো পুরো সমাধান সম্ভব না, কিন্তু পরিবর্তনের সূচনা হোক। জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামকে হতে হবে উদাহরণ।’ তিনি সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় হয়ে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ২৩ হাজার শিক্ষার্থীর সামনে নিজের জীবন ও কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ড. ইউনূস। একজন ছাত্র থেকে শিক্ষক, শিক্ষক থেকে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং নোবেল পুরস্কার অর্জনের গল্প শুনিয়ে দেন অনুপ্রেরণার বার্তা। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দেন মানবিক মূল্যবোধ ও সময়ের সাথে চলার দিকনির্দেশনা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট) ডিগ্রি প্রদান করে।
দিনের শেষ ভাগে তিনি যান নিজ গ্রামের বাড়িতে। দাদা-দাদির কবর জিয়ারত করেন এবং গ্রামের মানুষদের সাথে মিলিত হয়ে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেন। এলাকাবাসীর একটাই অভিমত ‘ঘরের ছেলে ঘরেই আলো জ্বালালেন।’